অশ্বমেধ-গোমেধ-নরমেধ যজ্ঞ এবং বলি সম্পর্কে কিছু কথা.....

অশ্বমেধ-গোমেধ-নরমেধ যজ্ঞ এবং বলি-

সর্বপ্রথমে একটা কথা বলে নেই ভাই…… আমি সমাজতত্ত্বের একজন ছাত্র, তাই সামাজিক ইস্যুগুলোর সুরাহা না করে আত্মা শান্তি পায় না। ধর্ম একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান। যাহোক এবার দেখি হিন্দুদের বৈদিক যজ্ঞে অশ্ব, গো বা গরু, নর বা মানুষ বলী দেয়া হতো কি না??? অনেক মুসলিম ভাই এমনকি হিন্দু ভাইরাও বলত যে বৈদিক যজ্ঞে নাকি এত বেশি পশু বলী দেয়া হতো এবং খাওয়া হতো যে ভারতে নাকি গরুর সংকট পড়ে গিয়েছিল, তাই হিন্দু পুরোহিতরা নাকি গরুকে দেবতা মনে করে তা খাওয়া বা হত্যা নিষেধ করেছে। এইবার দেখি বিষয়টা আসলে কি???
আমরা মহাভারতে দেখেছি যে রাজা যুধিষ্ঠির অশ্বমেধ যজ্ঞ করেছেন। সেখানে আমরা দেখেছি যে একটা ঘোড়া বেঁধে রেখে একটা যজ্ঞ করা হতো আগুন জ্বালিয়ে তাতে ঘি, চন্দন কাষ্ঠ ইত্যাদি সুগন্ধি দ্রব্য দিয়ে তার পর সেই ঘোড়াকে ছেড়ে দেয়া হতো। বৈদিক যুগের রাজা/সম্রাটরাই এই অশ্বমেধ যজ্ঞ করতো। যজ্ঞের পর ঘোড়াকে ছেড়ে দিয়ে তার পিছনে সম্রাটের সেনাবাহিনী থাকত। ঐ ঘোড়া বিভিন্ন
রাজ্যে প্রবেশ করতো। যে রাজা ঐ ঘোড়া আটক করতো না সেই রাজা যজ্ঞকারী সম্রাটের অধীনতা স্বীকার করেছেন বলে ধরে নেয়া হতো। আর যে রাজা ঘোরা আটক করতো তার সাথে যুদ্ধ হতো। বস্তুত, কোন রাজা যদি সম্রাট হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করত, তাহলে তিনি এই অশ্বমেধ যজ্ঞ করতো। মাত্র গুটিকয়েক বৈদিক সম্রাট এই যজ্ঞ করেছেন, যেমন- যুধিষ্ঠির, দশরথ, পরীক্ষিত ও জন্মেজয়। অশ্বমেধ যজ্ঞ মানে অশ্ব বা ঘোড়া বলী দেয়া না বা ঘোড়ার মাংস খাওয়াও না। ঘোড়ার মাংস বিষাক্ত তা খাওয়াও যায় না। তাই যারা বলেন যে অশ্বমেধ মানে অশ্ব বলী, গোমেধ মানে গরু বলী, নরমেধ মানে নরবলি তারা হয় বেদ পড়েননি না হয় হিন্দুদের অমৌলিক গ্রন্থ পুরাণসমূহ পড়ে বেদের কদর্থ করছেন।
আসলে মৌলিক বৈদিক গ্রন্থ বেদ সংহিতা, উপনিষদ, ব্রাহ্মন গ্রন্থসমূহের উপর জ্ঞান না থাকায় আমরা গোমেধ,অশ্বমেধ, নরমেধ ইত্যাদি পবিত্র শব্দ গুলির অর্থ না জেনেই শোনা কথার উপর ভিত্তি করেই বলে বেড়াই যে ,বৈদিক যজ্ঞে গো-অশ্ব বলি দেওয়ার বিধান আছে ! এবার দেখে নেই ‘যজ্ঞ’ কে পবিত্র বেদে কি বলা হয়েছে। পবিত্র বেদের প্রথম মন্ডলের প্রথম সুক্তের চার নং মন্ত্রে যজ্ঞকে ‘অধ্বরং’ বলা হয়েছে। বৈদিক ব্যাকরন গ্রন্থ নিরুক্ত এর ১.৩৩ এ বলা হয়েছে ‘অধ্বরং’ অর্থ হল অহিংস অর্থাত্ যজ্ঞ হল অহিংস। সেখানে রক্তপাতের কোন প্রশ্ন ই আসেনা। আর পবিত্র বেদে যেখানে শত শত মন্ত্রে পশুহত্যা নিষিদ্ধ করা হয়েছে,পশুদের উপকারী জীব বলে সেবা করতে বলা হয়েছে সেখানে যজ্ঞতে পশুবলীর চিন্তা আনাটাও অমূলক!
অশ্বমেধ যজ্ঞ কি?
“রাষ্টং বৈ অশ্ব মেধঃ । অগ্ন হি গৌঃ ।অগ্নির্বা অশ্বঃ আজ্যং মেধঃ ॥
(শতপথ ব্রাহ্মন ১৩.১.৬.৩)
অনুবাদ- অশ্ব হল রাষ্ট্রের প্রতীকি নাম (সুপ্রশাসকের প্রগতিশীল রাষ্ট্র অশ্বের ন্যয় বেগবান এই অর্থে)। এই রাষ্ট্রের মেধ(প্রগতি) কামনায় যে যজ্ঞ রাজা করেন তাই অশ্বমেধ যজ্ঞ।
গোমেধ যজ্ঞ কি?
গো শব্দের ৯টি অর্থের মধ্যে একটি হল পৃথিবী। পৃথিবী ও পরিবেশের নির্মলতা কামনায় যে যজ্ঞ বা উপাসনা তাই গোমেধ যজ্ঞ।
নরমেধ যজ্ঞ কি?
মানুষের মৃত্যুর পর তার আত্মার সদগতি কামনায় যে অগ্নিদাহাদি ভিত্তিক অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া (শ্রাদ্ধ) যজ্ঞ করা হয় তাই নরমেধ যজ্ঞ।
অশ্ব,গবাদি পশু ইত্যাদি হত্যা করে ,হোম বা যজ্ঞ করার বিধান কোন প্রামাণ্য শাস্ত্রে নেই । কেবল পৌরাণিক যুগে অল্প শিক্ষিত পুরোহিত/ব্রাহ্মণরা বেদের অর্থ না বুঝে এটা শুরু করেছে।(Collected)