প্রশ্নঃ রাধা কে সবাই কৃষ্ণ কলঙ্কিনী বলে। রাধা রাগ করে না কেন?

প্রশ্নঃ রাধা কে সবাই কৃষ্ণ কলঙ্কিনী বলে। রাধা রাগ করে না কেন?

 উত্তরঃ - একদিন কৃষ্ণ রাধাকে বলিল, রাধে তোমাকে সবায় কৃষ্ণকলঙ্কিনী কৃষ্ণকলঙ্কিনী বলে, তুমি প্রতিবাদ করতে পারো না। রাধা বলিল, যদি লোকে আমাকে শুধু কলঙ্কিনী বলত, তাহলে প্রতিবাদ করতাম। কিন্তু আমাকে সবাই কৃষ্ণ কলঙ্কিনী বলে ডাকে তাই প্রতিবাদ করি না। কারন যতবার আমায় কৃষ্ণকলঙ্কিনী বলে ততবার আমি তোমার কৃষ্ণ নামটি শুনতে পায়,কলঙ্কিনী শব্দটা শুনতে পাই না। সত্যিয়েই তো যে হৃদয় লজ্জায় আবৃত্ত সে হৃদয়ে প্রিয়তমের স্থান কোথায়। বৃন্দাবনের নিধুবনে রাধাকে কৃষ্ণ বলিল, রাধে তোমাকে আমি অনেক কষ্ট দিয়েছি, কাদিয়েছি। তবু তুমি আমাকে অনেক ভালোবাসো। তুমি হলে আমার প্রেমের গুরু। তোমার এই প্রেমের ঋণ এই জন্মে পরিশোধ করতে পারব না। আগত কলীযুগে তোমার হৃদয় আর আমার শরীর নিয়ে জন্ম নেবো, আর তোমার প্রেমের ঋণ শোধ করে দেবো। তাই কলীযুগে গৌবিন্দের গৌ আর রাধার রা নিয়ে গৌরা রূপে জন্মগ্রহন
করলেন। তিনি জীবের মুক্তির জন্য নিয় এলেন হরিনাম।
হরের্নাম হরের্নাম হরের্নামৈব কেবলম্।
কলৌ নাস্তৈব নাস্তৈব নাস্তৈব গতিরন্যথা।
দুটি বাহু উর্ধমুখে প্রশারিত করে হরিনাম প্রচার করলেন। দেখুন এটাকে বলে, সারেন্ডার অফ লাইফ। অর্থাৎ আত্মসমর্পন। উপরদিকে বাহু তুলে আত্মসমর্পন না করলে ঈশ্বরের কৃপা লাভ হয় না। নবদ্বীপ মায়াপুর গেলেই বুঝতে পারবেন। এইভাবেই আত্মসমর্পন করেছিল বৃন্দাবনের গোপীরা। তারা যমুনায় বিবসনা হয়ে জলকেলি করছিল। এদিকে গোবিন্দ তাদের বসনগুলি চুরি করে গাছের ডালে ঝুলিয়ে দিল। গোপীরা একটু পরে দেখল তাদের বসন গুলি গোবিন্দ নিয়ে রেখেছে। তারা তখন এক হাতে লজ্জা নিবারন করছে আর এক হাতে গোবিন্দকে বসন চাইছে। গোবিন্দ বললেন, এসে বসন গুলো নিয়ে যাও। গোপীরা বলল দেখছো না আমরা বিবসনা হয়ে আছি, কি করে যাবো। গোবিন্দ বললেন, যেভাবে জলে নেমেছো সেভাবে এসো। সখীরা বলল নির্লজ্জ, বেহায়া। আরে তখন কেউ ছিল না। গোবিন্দ বললেন তোমরা আমাকে হাসালে। আমি আবার কোথায় নেই? আমি আকাশে বাতাসে জলে স্থলে সব জায়গায় আছি। যদি বসনগুলি পেতে চাও তাহলে দুহাত তুলে আমার কাছে চাও। কারন এক হাতে কিছু দিতেও নেই আর নিতেও না। গোপীরা দুহাত তুলে সমর্পন করল। এবার ফিরে যায় নবদ্বীপে। গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু কাটোয়ার কেশবভারতীর কাছে দিক্ষা নেন। দুই মাতাল জগাই আর মাধাই কে উদ্ধার করেন। তারপর হা কৃষ্ণ হা কৃষ্ণ বলতে বলতে, কৃষ্ণ নামে বিভোর হয়ে, কৃষ্ণ নামে আত্মহারা হয়ে নগ্ন পায়ে ছুটে চললেন নীলাচলে (পুরী)। যখন তার মধ্যে রাধাভাব জাগে তখন কৃষ্ণ কৃষ্ণ বলে বিভোর হয়ে যান। আর যখন তার মধ্যে কৃষ্ণ ভাব জাগে তখন তিনি রাধা নামে বিভোর হয়ে যান। তার পিছনে ছুটে চলেছে অসংখ্য ভক্ত। পুরী থেকে দাক্ষিণাত্যে এবং দাক্ষিনাত্য থেকে ফিরে পুরিতে। পুরি থেকে মথুরা বৃন্দাবন। বৃন্দাবনে প্রবেশ করে দ্বাপরের লীলা মনে পড়ে গেল। তারপর কাশী প্রয়াগ ত্রিবেনী নগ্ন পদব্রজে পরিভ্রমন করে নাম বিলিয়ে দিলেন। নামের মহিমা না থাকলে এটা কি সম্ভব?