পরম প্রেমময় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের গৌররূপে অবতরণের কারণ:
অন্যান্য যুগের তুলনায় কলিযুগ অত্যন্ত অধঃপতিত।
সত্যযুগে তপস্যা, শৌচ, দয়া ও সত্য ধর্মের এই চারটি অংশ পরিপূর্ণভাবে বিদ্যমান ছিল। ক্রমে ক্রমে অধঃপতিত হয়ে ধর্ম ত্রেতাযুগে তিনভাগ, দ্বাপরে দুভাগ ও অবশেষে কলিযুগে একভাগে এসে পৌঁছায়।
কলিযুগে ধর্মের পতনের ফলে মানুষের যে কি অবস্থা, সেই সম্বন্ধে শ্রীমদ্ভাগবতে(১/১/১০)বলা হয়েছে- প্রায়েণাল্পায়ুষঃ সভ্য কলাবস্মিন্ যুগে জনাঃ। মন্দাঃ সুমন্দমতয়ো মন্দভাগ্য হ্যপদ্রুতাঃ\“হে মহাজ্ঞানী!
এই কলিযুগের মানুষেরা প্রায় সকলেই অল্পায়ু। তারা কলহপ্রিয়, অলস, মন্দগতি, ভাগ্যহীন এবং সর্বোপরি তারা নিরন্তর রোগ আদির দ্বারা উপদ্রুত।” দেবর্ষি নারদ মুনি কৃষ্ণকথা শ্রবণের লোভে জগতের সর্বত্র ঘুরে বেড়াতে লাগলেন, কিন্তু কোথাও কৃষ্ণনামের মহিমা শুনতে পেলেন না।
কৃষ্ণপ্রেমের আবেশে নারদ মুনির হর্ষ, পুলক, কম্প আদি অষ্টসাত্ত্বিক বিকারের লক্ষণগুলি প্রকাশ পাচ্ছিল। কিন্তু কলিহত জীবের কৃষ্ণবিমুখতা দেখে তিনি অত্যন্ত ব্যথিত হলেন।
তিনি বুঝতে পারলেন, কলির কালসর্প সকলকে দংশন করেছে। সকলেই কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ ও মাৎসর্যে আচ্ছন্ন হয়ে, “আমি ও আমার” এই চিন্তায় বিভোর। কলিহত জীবের এই প্রকার দুর্দশা দেখে নারদ মুনি ভাবলেন, “এদের মুক্তির উপায় কিছুই দেখতে পাচ্ছি না; একমাত্র ভগবান কৃষ্ণ স্বয়ং অবতরণ করে যদি এদের মুক্ত করেন, তবেই কলির জীবসকল মুক্তি লাভ করতে পারে। ” তখন নারদ মুনি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলেন, “যেভাবে হোক কৃষ্ণকে এই কলিযুগে আনতেই হবে।
ভগবান ভক্তবৎসল, তিনি ভক্তের ডাকে অবশ্যই সাড়া দেবেন, সকল শাস্ত্রে সেটি প্রতিপন্ন হয়েছে।” আর ভগবান কৃষ্ণের সাথে ব্রহ্মা, শিব আদি দেবতারাও যাতে এই পৃথিবীতে আসেন, তাও তিনি প্রার্থনা করেন। এরূপ চিন্তা করে শ্রীনারদ মুনি বীণা বাজাতে বাজাতে দ্বারকার অভিমুখে চলতে লাগলেন।
এদিকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সত্যভামার গৃহ থেকে বিদায় নিয়ে প্রভাতে রুক্মিণীদেবীর গৃহে এসেছেন তাঁকে কৃপা করার জন্য। রুক্মিণীদেবী পূর্ব থেকেই সুসজ্জিতা হয়েছিলেন। তাঁর সখীরা তাড়াতাড়ি সুবাসিত বারি এনে দিলেন, আর তা দিয়ে উত্তমরূপে শ্রীকৃষ্ণের পাদ প্রক্ষালন করতে করতে ভগবানের পাদপদ্ম হৃদয়ে ধারন করে রুক্মিণীদেবী অঝোরে কাঁদতে লাগলেন।
রুক্মিণীদেবীকে অকস্মাৎ ক্রন্দন করতে দেখে, ভগবান কৃষ্ণ অবাক হয়ে বলতে লাগলেন, “কি কারণে তুমি কাঁদতে শুরু করেছ? আমি কি তোমার কোনও আদেশ অবজ্ঞা করেছি অথবা তোমার কাছে কোনও দোষ করেছি? পূর্বে তোমার সঙ্গে পরিহাস করে একবার আমি তোমার মনে দুঃখ দিয়েছিলাম, সেই কথা মনে পড়াতে কি তুমি এমন ক্রন্দন করছ?
কিন্তু তোমাকে আমি যেভাবে প্রাণের চেয়ে ভালবাসি, সেভাবে আর কাউকে ভালবাসি না। তা হলে তোমার মনের কথা আমাকে দয়া করে বল, কি জন্য তোমার দুঃখ হল। ” ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নিকট এই প্রকার উক্তি শ্রবণ করে রুক্মিণীদেবী বলতে লাগলেন, “যেখানে তুমি আমার প্রাণনাথ আর তোমার পাদপদ্মের সেবা যে লাভ করতে পারে, তার আবার কিসের দুঃখ? ব্রহ্মা, শিব সকলেই তোমার পাদপদ্মের সেবা লাভের জন্য কাতর হয়ে প্রার্থনা করে। তুমি জগতের সকলের মনের কথা জান, অথচ নিজের প্রেমার মনের কথা জান না।
যদি তুমি ‘রাধার ভাব’ হৃদয়ে ধারণ করতে, তা হলে আমার মনের কথা জানতে পারতে।” রুক্মিণীদেবীর শ্রীমুখ থেকে শ্রীমতী রাধারানীর কথা শ্রবন করে কৃষ্ণ তৎক্ষণাৎ চমকিত হয়ে রুক্মিণীদেবীকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “তুমি যা বললে, তা আবার বল, আমি ঠিক শুনতে পাইনি। তোমার কাছ থেকে আবার শোনার জন্য আমার হৃদয় ব্যাকুলিত হচ্ছে। আমার মনে হচ্ছে এই জগতে এমন কিছু দুর্লভ বস্তু রয়েছে, যা আমি এখনও জানি না। হে দেবী! দয়া করে তুমি আমাকে সেই কথা আর একবার শোনাও!
এভাবে দ্বারকায় বসে যখন শ্রীকৃষ্ণ হৃদয়ের আর্তি প্রকাশ করছিলেন, তখন রুক্মিণীদেবী করুণ স্বরে বলতে লাগলেন, “তুমি জগতের নাথ, কোন কিছুই তোমার অগোচর নয়, অথচ তুমি আমার মনের দুঃখ জান না। আমার একমাত্র ভয় হয় যদি আমি তোমার চরণসেবার সুখ থেকে বঞ্চিত হই। কারণ তোমার পাদপদ্মে এমন অমৃত রয়েছে যে, সে আর এই জগতের কিছুই কামনা করে না। ব্রহ্মা, শিব, নারদ সকলেই তোমার পাদপদ্মের সেবার জন্য ধ্যান করছে, এমন কি বিষ্ণুর বক্ষবিলাসী লক্ষীদেবী পর্যন্ত তোমার চরণ-সেবার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে।
অথচ তুমি তোমার পাদপদ্মের মাধুরীর মহিমা জান না। তোমার পাদপদ্মের বিরহের যে কি জ্বালা, তা একমাত্র বৃন্দাবনের শ্রীমতি রাধারানীই জানেন; তাঁর ভাগ্যের সীমা নেই। রাধার প্রেমে তুমি এখনও বাঁধা, আর তাঁর কথা শোনা মাত্রই দেখছি তোমার আঁখি অশ্র“তে ছল ছল করছে। সুতরাং তুমি রাধাকে এখনও ভুলতে পারনি। শুধু তাই নয়, তুমি দিবানিশি অন্তরে শ্রীমতী রাধার নাম জপ করছ।
তাই হে প্রাণনাথ! আমি ভীত হয়ে পড়েছি, কারণ শ্রীমতী রাধারানী বৃন্দাবনে তোমার বিরহে যেভাবে দিবানিশি অশ্র“বর্ষণ করে উন্মাদের মতো প্রলাপ বকছে, আমিও হয়ত একদিন তোমার পাদপদ্মের সেবা থেকে বঞ্চিত হতে পারি।” রুক্মিণীদেবীর এই প্রকার হৃদয়-বিদারক বাক্য শ্রবণ করে ভগবান কৃষ্ণের অন্তর উল্লসিত হল, চক্ষু রক্তিমবর্ণ ধারণ করে জলে পূর্ণ হল এবং বলতে শুরু করলেন, “শ্রীরাধিকার প্রেমের মহিমা কি রকম, ওই প্রেমের দ্বারা শ্রীরাধা আমার যে অদ্ভুত মাধুর্য আস্বাদন করেন, সেই মাধুর্যই বা কি রকম এবং আমার মাধুর্য আস্বাদন করে শ্রীরাধা যে সুখ অনুভব করেন, সেই সুখই বা কি রকম, এই সকল আমি অবশ্যই আস্বাদন করব।
এভাবেই আমি প্রেমার সুখ আস্বাদন করব।” ঠিক সেই মুহূর্তে নারদ মুনি দ্বারকায় কৃষ্ণের সকাশে উপস্থিত হলেন। রুক্মিণীদেবী উপযুক্তভাবে অতিথি সৎকার করে নারদ মুনিকে বসতে আসন দিলেন।
কৃষ্ণও নারদ মুনিকে আলিঙ্গন করে, কুশল জিজ্ঞাসা করে আগমনের হেতু জিজ্ঞাসা করলেন। কিন্ত নারদ মুনি কৃষ্ণপ্রেমে বিহ্বল, চক্ষু অশ্রুতে পূর্ণ এবং কণ্ঠের স্বর গদগদ, তাই কিছু বলতে পারছিলেন না। শ্রীকৃষ্ণ বললেন, “নারদ! তুমি আমার প্রাণাধিক প্রিয় অথচ তোমার অন্তর দেখছি বিষণ। তুমি নিশ্চিন্তে তোমার মনের অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে পার।”
তখন নারদ মুনি বলতে শুরু করলেন, “তুমি হচ্ছ অন্তর্যামী, সব কিছুই তুমি জান; তোমার গুণকথা শ্রবণই হচ্ছে আমার আহার। সেই লোভে সারা সংসার ঘুরে বেড়ালাম অথচ কৃষ্ণনাম কোথাও শুনতে পেলাম না। সমস্ত সংসার কৃষ্ণনামে বিমুখ, এটিই আমার শোকের কারণ।
লোকের নিস্তারের কোনও উপায় আমি দেখতে পাচ্ছি না। ” শ্রীকৃষ্ণ তখন নারদ মুনিকে সান্ত্বনার নিমিত্ত বলতে লাগলেন, “তুমি কি ভুলে গেলে, পার্বতী শিবের কাছ থেকে মহাপ্রসাদের কণিকা না পাওয়াতে সে শিবের সামনে প্রতিজ্ঞা করেছিল যে, ‘তুমি যেমন মহাপ্রসাদের কণিকা আস্বাদন করে কৃষ্ণপ্রেমে উদ্দণ্ড নৃত্য করছ, অচিরেই আমি এই মহাপ্রসাদ সকল লোকের মধ্যে বিতরণ করব, যাতে সাধারণ লোকেরাও মহাপ্রসাদের কৃপা লাভ করে কৃষ্ণপ্রেমে বিভোর হয়।’ তা ছাড়া রুপিণীর কাছ থেকে আজ এক অপরূপ কথা আমি শ্রবণ করলাম।
তা শুনে আমি প্রতিজ্ঞা করেছি, শীঘ্রই রাধার ভাব ও কান্তি নিয়ে অতি দীনহীনভাবে আমি কলিতে অবতীর্ণ হয়ে সকলকে কৃষ্ণপ্রেমে ডুবাব।” সেই সম্বন্ধে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ প্রতিজ্ঞা করেছেন যুগধর্ম প্রবর্তাইমু নাম- সংকীর্তন। চারি ভাব-ভক্তি দিয়া নাচামু ভুবন \ আপনি করিমু ভক্তভাব অঙ্গীকারে।
আপনি আচরি’ ভক্তি শিখাইমু সবারে \ ( চৈঃ চঃ আদি ৩/১৯-২০) ভগবান শ্রীকৃষ্ণ দ্বারকায় নারদ মুনিকে আরও বললেন যে, শীঘ্রই তিনি কলিতে তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ ভক্ত শ্রীমতী রাধারানীর ভাব ও অঙ্গকান্তি নিয়ে এবং সুন্দর তনু, দীর্ঘ কলেবর ও আজানুলম্বিত বাহু নিয়ে নিজ ভক্তিযোগ সংকীর্তন যজ্ঞ প্রবর্তন করবার জন্য নিজ অন্তরঙ্গ পার্ষদ পরিবৃত হয়ে নবদ্বীপে শচীগৃহে জন্মগ্রহণ করবেন।
এই কথা প্রতিশ্র“তি দিতে দিতেই শ্রীকৃষ্ণ তৎক্ষণাৎ নারদ মুনির নিকট অপূর্ব রূপমাধুরী সমন্বিত গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুরূপে প্রকাশিত হলেন। সেই দিব্যরূপ দেখে নারদ মুনি প্রেমসিন্ধুতে ভাসতে লাগলেন। তাঁর আঁখি থেকে সহস্রধারায় অশ্র“পাত হতে লাগল। সেই গৌররূপের তেজ কোটি কোটি সূর্য তেজের থেকেও ঝলমল করছিল।
তখন নারদ মুনি প্রেমে মূর্ছিত হয়ে চোখ মুদ্রিত করলেন। কিছুক্ষণের মধ্যে কৃষ্ণ তাঁর সেই রূপ সম্বরণ করলেন। তখন নারদ মুনি গৌররূপ আর দেখতে না পেয়ে, পুনঃদর্শনের জন্য ব্যাকুল হলেন। তখন দ্বারকায় শ্রীকৃষ্ণ বললেন যে, “নারদ! তোমার উদ্বিগ্ন হবার কোন কারণ নেই, তুমি অবাধে সর্বত্র যাতায়াত করতে পারবে।
এখন গিয়ে ব্রহ্মা, শিব, আদি সকলের কাছে প্রচার কর যে, আমি কলিযুগে সপার্ষদ অবতীর্ণ হয়ে নাম সংকীর্তনের মাধ্যমে কৃষ্ণপ্রেম প্রদান করব।” ভগবান কৃষ্ণের এই কথা শুনে নারদ মুনির সমস্ত দুঃখ অপসারিত হল এবং বীণা বাজিয়ে গৌররূপের চিন্তা করতে করতে দ্বারকা নগরী থেকে নিষ্ক্রান্ত হলেন। দেবর্ষি নারদ কৃষ্ণের পরম চিত্তাকর্ষক গৌররূপ দর্শনে অতীব প্রেমাপ্লুত হয়ে, সেখান থেকে গৌরমহিমা কীর্তন করতে করতে নৈমিষারণ্যে এসে উপস্থিত হলেন।
সেখানে ভক্তশ্রেষ্ঠ উদ্ধব মুনিবরকে কলিহত জীবের পরিত্রাণের উপায় জিজ্ঞাসা করলে, দেবর্ষি নারদ তাঁর নিকট পূর্বোক্ত সকল বৃত্তান্ত বর্ণনা করে সর্বযুগের সার কলিযুগ এবং তার যুগধর্ম সংকীর্তনের মাহাত্ম্য কীর্তন করে, কৈলাসে বৈষ্ণবশ্রেষ্ঠ দেবাদিদেব শম্ভুর সমীপে উপস্থিত হলেন। কৈলাসে নারদ মুনি পার্বতীকে তাঁর পূর্ব প্রতিজ্ঞা স্মরণ করবার জন্য মহাপ্রসাদের মাহাত্ম্য জেনে, সেই লোভবশত দ্বাদশ বর্ষ লক্ষীদেবীর সেবা করে তাঁর কৃপায় যে মহাপ্রসাদ প্রাপ্ত হয়েছিলেন সেই কথা জ্ঞাপন করলেন। তারপর নারদ মুনি ব্রহ্মার নিকট উপস্থিত হয়ে কলিযুগে গৌরসুন্দর শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর অবতরণের কথা কীর্তন করলে, ব্রহ্মা দেবর্ষি নারদের নিকট শ্রীমদ্ভাগবত থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে কলিযুগে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর অবতরণের কথা দিব্য আনন্দে কীর্তন করলেন এবং এই পৃথিবীতে অবতীর্ণ হবার সময় সকল দেবতা সহ তিনিও যে আসবেন, সে কথাও প্রকাশ করলেন।
অতঃপর মর্তলোকে অবতীর্ণ হওয়ার সময় শ্রীমতি রাধিকার ভাবকান্তি অঙ্গীকারপূর্বক রুস্কিনী সত্যভামা আদি নিত্য পরিকর সহ সংকীর্তনরূপ অস্ত্র নিয়ে শ্রীকৃষ্ণ শ্রীগৌরাঙ্গ মহাপ্রভুরূপে, শ্রীবলরাম শ্রীমন্নিত্যানন্দ প্রভুরূপে, মহাবিষ্ণু অদ্বৈত প্রভুরূপে, তা ছাড়া অসংখ্য পরিকর অবতীর্ণ হয়েছিলেন এবং সকলেই শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর সংকীর্তন যজ্ঞে অংশ গ্রহণ করেছিলেন। তারপর শ্রীঅদ্বৈত আচার্য প্রভু ও নামাচার্য হরিদাস ঠাকুরের হুঙ্কারে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুরূপে ধরাধামে অবতরণের কাহিনী আমরা শ্রীল কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামী রচিত শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত ও অন্যান্য গ্রন্থ থেকে জানতে পারি।
অপরদিকে যুগধর্ম শ্রীগৌর সুন্দরের বৈশিষ্ট্য শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুর শ্রীমন্মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যদেবের বিবরণ, উপদেশ ও শাস্ত্র-সিদ্ধান্ত বিশেষ যত্নসহকারে স্বাধীন বিচারের সহিত নিরপেক্ষভাবে আলোচনা করিলে তাঁহাকে ‘সর্ব্বাচার্য্য’ বলিয়া স্বীকার করিতে বাধ্য হইবে। যত প্রকার সাম্প্রদায়িক গুরুর বিষয় লিখিত আছে, সকলেই তাঁহার অধীন, -এইরূপ দৃষ্টান্ত দৃষ্ট হইবে।
শ্রীচৈতন্যদেব সর্বজীবের চৈত্ত্য-গুরু হইয়াও পূর্ণভাবে আবির্ভূত হইয়াছেন; অতএব জীবসকল সমস্ত বন্ধন হইতে মুক্ত হইয়া শ্রীচৈতন্যদেবের স্বাধীনতারূপ পাদপদ্ম-মধু পান করিতে থাকুন। শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য ও শ্রীকৃষ্ণ নিত্য-প্রকাশ। কে অগ্রে, কে পশ্চাৎ, বলা যায় না।
আগে চৈতন্য ছিলেন, পরে রাধাকৃষ্ণ হইলেন, আবার সেই দুই একত্র হইয়া এখন চৈতন্য হইয়াছেন, ইহার তাৎপর্য, কেহ আগে, কেহ পাছে, এরূপ নহে- দুই প্রকাশই নিত্য। কৃষ্ণ ও গৌরকিশোর ইহারা পৃথক তত্ত¡ নহেন, উভয়েই মধুর রসের আশ্রয়। একটু ভেদ এইমাত্র যে, মাধুর্য্যরসে দুইটী প্রকার আছে অর্থাৎ মাধুর্য্য ও ঔদার্য্য; তন্মধ্যে যেস্থানে মাধুর্য্য বলবৎ, সেইস্থানে কৃষ্ণস্বরূপ এবং ঔদার্য্য যেস্থানে বলবৎ সেইস্থানে শ্রীগৌরাঙ্গ স্বরূপ।
কলিকালে অবতার কেবল কীর্তনাদি দ্বারা পরম দুর্লভ প্রেম সংস্থাপন করিবেন, তাহাতে অন্য তাৎপর্য্য না থাকায়, সেই অবতার সর্ববতারশ্রেষ্ঠ হইলেও সাধারণের নিকট গোপনীয়। গৌরাঙ্গের যুগল দুই প্রকার- অর্চ্চনামার্গে শ্রীগৌর-বিষ্ণুপ্রিয়া পূজিত হন, আর ভজনমার্গে শ্রীগৌর-গদাধর। প্রাণনাথ নিমানন্দকে সাক্ষাৎ নন্দীশ্বরপতির পুত্র বলিয়া জান-কৃষ্ণ হইতে কোনক্রমে তাঁহাকে তত্ত¡ন্তর মনে করিও না।
নবদ্বীপে অবতীর্ণ হইয়া একটী পৃথক ভজনলীলা দেখাইয়াছেন বলিয়া তাঁহাকে নবদ্বীপনাগর মনে করিয়া ব্রজ-ভজন পরিত্যাগ করিও না। গোরানাম না লইয়া, যেই কৃষ্ণ ভজে গিয়া, সেই কৃষ্ণ বহুকালে পায়। গৌরনাম লয় যেই, সদ্য কৃষ্ণ পায় সেই, অপরাধ নাহি রহে তায়\” অতএব গৌরানুগ না হইয়া কৃষ্ণভজনে ইহাই পার্থক্য।
শ্রীগৌরাঙ্গদেবের চরণাশ্রয় করতঃ কৃষ্ণভজন না করিলে পরম পুরুষার্থ পাওয়া যায় না। শ্রীগৌরাঙ্গের উদয়কালে পূর্বে শ্রীমন্মাধবেন্দ্রপুরী প্রমুখ শ্রীকৃষ্ণভজন করিতেন। তাহাদের ভজন সম্পূর্ণরূপে প্রতিপদ ছিল। যদিও গৌরাঙ্গদেবের বাহ্য প্রকাশ তখন হয় নাই’ তথাপি তাঁহাদের হৃদয়ে প্রভুর ভাবোদয় ছিল। দুর্ভাগ্যের বিষয় এই-‘শ্রীগৌরাঙ্গ’ বলিয়া দোহাই দিয়া শ্রীকৃষ্ণভজন পরিত্যাগ করা যাহাদের মত হইয়াছে; তাহারা গৌরাঙ্গের আজ্ঞা পালন করেন না।
গৌরে কৃষ্ণে কোন ভেদ নাই। যাহারা মনে করেন, গৌরাঙ্গেচরণাশ্রয় করিলে আর কৃষ্ণকে স্মরণ করিতে হইবে না, তাহাদের গৌরে-কৃষ্ণে ভেদ জ্ঞান হয়। কৃষ্ণলীলা ও গৌরলীলায় কোন ভেদ জ্ঞান নাই, দুই লীলায় এক। কৃষ্ণ-লীলায় ভজন বিষয় প্রতিভাত, গৌরাঙ্গলীলায় সেই ভজনের প্রণালী প্রতিভাত হইয়াছে। প্রণালী ছাড়িয়া ভজন ও ভজন ছাড়িয়া কেবল প্রণালী কখন পূর্ণ হইতে পারে না। শ্রীগৌরাঙ্গ চরিত্র যত পাঠ করা যায়, কৃষ্ণলীলায় ততই প্রেম হয়।
শ্রীকৃষ্ণ লীলা যত পাঠ করা যায়, ততই গৌরলীলা মনে পড়ে। কৃষ্ণ ত্যাগ করিয়া গৌর এবং গৌর ত্যাগ করিয়া কৃষ্ণ কখনও ভাল বলিয়া বোধ হয় না। গৌরকে পরোপাশ্য বলিয়া যখন বিশ্বাস করা যায়, তখন শ্রী গৌরাঙ্গের কৃষ্ণলীলা সম্পূর্ণরূপে উদয় হয়। এই সকল কথা বড় গোপনীয় হলেও বড় দুঃখের সহিত প্রকাশ করিতে হইতেছে। আমরা গৌর ভজিব, আর কৃষ্ণস্মরণ করিব না’- এ কথা একটি দৌরাত্ম্যের মধ্যে পরিগণিত। সেইরূপ ‘কৃষ্ণ ভজিব, গৌরকে স্মরণ করিব না’ইহাও মহা দুর্ভাগ্য বলিতে হইবে।
সাধুমুখে হরিকথা শ্রবণ করাই সাধকের পক্ষে মঙ্গল শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর সাধকের পক্ষে গুরু-বৈষ্ণবের সাক্ষাৎ সঙ্গ ও তার ফলে হরিকথা শ্রবণ মাধ্যমে যে মঙ্গল উদয় হয়, জড়বুদ্ধি হয়ে বহু জন্ম বিগ্রহ অর্চন করেও তা হয় না। শ্রীগুরু-বৈষ্ণব কথার মাধ্যমে যে ভাব প্রকাশ করেন, শ্রীবিগ্রহ কৃপা করে আমাদের দর্শন দিয়েও তা করেন না। যিনি অন্তর্যামী ভগবান, তিনিও আমাদের সঙ্গে কথা বলেন না। শ্রদ্ধা যদি না হয়, তা হলে সাধু দর্শন বা ভগবৎ দর্শন হয় না।
বরং মৎসরতা বা হিংসা এসে উপস্থিত হয়। হিংসা আসে কেন? অন্য লোক আমার উপরে উঠে যাচ্ছে, এ জন্যই হিংসা হয়। তাই শ্রীমদ্ভাগবতের গোড়ায়ই ভাগবত-ধর্মকে নির্মৎসর সাধুদের ধর্ম বলে বলা হয়েছে। ‘আমি সেবা করবো, আমি সেব্য নই’ এই সুবুদ্ধি যদি উদিত হয়, তাহলে যেসব দুর্বুদ্ধি মাতা-পিতা বা লৌকিক আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে পেয়ে এসেছি বা শিখে এসেছি, সেগুলি কেটে যেতে পারে। তা না হলে ওই দুর্বুদ্ধিগুলি আরও পুষ্ট হতে থাকবে।
হরিকথা প্রসঙ্গ ও হরিসেবা থেকে বিমুখ হলেই সংসার ভোগ বাসনায় আবদ্ধই থাকতে হবে। কৃষ্ণসেবা বাদ দিয়ে অন্য অভিলাষ চরিতার্থ করা, পর চর্চা করা, পরস্পর কলহ প্রভৃতি কাজে দিন কেটে যাবে। বিশেষত মঠবাসীরা বৈষ্ণবসেবাকে সর্বপ্রধান মঙ্গল কাজ বলে বুঝতে না পারলে ভজন রাজ্যে দিন দিন অগ্রসর হতে পারবেন না।
নিষ্কপটভাবে অকপট বৈষ্ণবগণের প্রীতির জন্য কায়-মনো বাক্যে অনুশীলন করতে হবে। ‘বৈষ্ণবের আবেদনে কৃষ্ণ দয়াময়। এ হেন পামর প্রতি হবেন সদয়। এই কথা সর্বক্ষণ স্মরণ রাখতে হবে। যিনি শ্রীভগবান ও শ্রীগুরুদেব অচলা শ্রদ্ধা-বিশিষ্ট, তাঁরই হৃদয়ে পরমার্থ বিষয়ক সত্য বাক্য প্রকাশিত হয়।
কৃষ্ণসেবা ছাড়া নিত্য কৃষ্ণদাস বৈষ্ণবের অন্য কোনও চেষ্টা নেই। কৃষ্ণবিস্মৃতি থেকেই দেহাত্ম অভিমান উদিত হয়। সতীর্থদের মধ্যে কাউকেও হরি-গুরু-বৈষ্ণবসেবা থেকে বিচ্যুত হতে দেখলে, কোন গুরুভাই অধঃপতিত হয়েছে বুঝতে পারলে তাকে সরলভাবে হরিভজনের কথা ভালোভাবে বুঝিয়ে শ্রীগুরু-গৌরাঙ্গের মঙ্গলময় বাণী তার কাছে কীর্তন করে তাকে সর্বক্ষণ হরি-গুরু-বৈষ্ণব সেবায় নিযুক্ত রাখতে হবে।
হরিকথা বলে তাদেরকে কৃপা করতে হবে। তাদের অধঃপতনে কটাক্ষ করে আনন্দবোধ করা তাদের মঙ্গল কামনা নয়। এতে আমাদের নিজেদের ও অপরের মঙ্গল সাধিত হয়ে সত্য সত্যই মঠবাসের সার্থকতা সম্পাদিত হবে। পরস্পরের হরিভজনের সহায়তার জন্যই আমরা একসঙ্গে বাস করছি। জীব যখন নিষ্কপটভাবে শ্রীভগবানের কাছে আত্ম নিবেদন জ্ঞাপন করে, তখন শ্রীভগবান মহান্ত গুরুরূপে আবির্ভূত হন। মহান্ত গুরুর কাছে দিব্য জ্ঞান লাভ না করলে কেউ শ্রীকৃষ্ণসেবা অধিকার লাভ করতে পারে না।
কৃষ্ণসেবা ছাড়া আত্ম-আনন্দ লাভ অসম্ভব। ইন্দ্রিয় সুখ লাভ হতে পারে, কিন্তু আত্মার প্রসন্নতা লাভ হয় না। হরিভজন করলে শরীর মন আত্মা-তিনটি ভালো থাকবে, আর হরিভজন বিমুখ হলে তিনটিই প্রতিকূল হয়ে দাঁড়াবে। যে ব্যক্তি কপটতা যুক্ত হয়ে বাইরে কৃষ্ণভজনের অভিনয় দেখায়, অন্তরে কৃষ্ণের কাছে ধর্ম-অর্থ-কাম-মোক্ষ- এই কৈতবগুলি বাঞ্ছা করে, কৃষ্ণ তার অভিলষিত এই সমস্ত কৈতব দিয়ে তাকে বঞ্চনা করেন, তাঁকে কখনও প্রেমভক্তি প্রদান করেন না।
কিন্ত যে ব্যক্তি নিষ্কপটভাবে কৃষ্ণের ভজন করতে করতে অজ্ঞানতাবশত কৃষ্ণের নিকট বিষয়সুখ প্রার্থনা করে থাকে, কৃষ্ণ কৃপাপরশ হয়ে সেই নিষ্কপট অজ্ঞ ব্যক্তিকে যথার্থ সাধুদের কাছে হরিকথা শ্রবণের সুযোগ দান করে অজ্ঞের তুচ্ছ বিষয়সুখ বাসনা নিরস্ত করে দেন। যেমন ধ্র“বকে কৃষ্ণ নারদের মাধ্যমে কৃপা করেছিলেন।
জড়বুদ্ধি সহজিয়াদের কপটভাবে আছে বলে তারা প্রকৃত নিষ্কপট ও অকৃত্রিম সাধুর দর্শন ও তাঁদের বাণী শ্রবণ করতে পারে না। অর্থাৎ, কৃষ্ণ কৃপা করে তাদের বিষয় বাসনা ভুলিয়ে দেন না। তারা কৃষ্ণের মায়ার চাতরে পড়ে থাকে। মোট কথা এই যে, কৃষ্ণভজনের অভিনয়কারী কপট ব্যক্তিকে কৃষ্ণ কখনও সুদুর্লভ প্রেমভক্তি প্রদান করেন না।
কেবল নিষ্কপট ভজনকারী অজ্ঞ ব্যক্তিকে দয়াপরবশ হয়ে সদ্গুরুর মাধ্যমে শুদ্ধভক্তি বা প্রেমভক্তি প্রদান করেন। যে সব মানুষ হরিভজন করে না, যারা হরি সম্বন্ধহীন, তাদের জীবিত থেকে দৌরাত্ম্য করা অপেক্ষা জীবন ধারণ না করাই ভালো। মানুষ ও দেবতা প্রভৃতি যদি শ্রীহরির উপাসনা না করেন, তবে তাঁরা কেবলমাত্র জগতে জঞ্জাল আনয়ন করেন।
দেবতাদের উপাস্য যে কৃষ্ণ, মানুষেরও উপাস্য সেই কৃষ্ণ। সুতরাং অন্যান্য দেবতার উপাসনা না করে সর্বসর্বেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের উপাসনা করলেই সবার উপাসনা হয়ে যাবে। যুগধর্ম হল যুগের ধর্ম। আমাদের চারটি যুগ রয়েছে যথাঃ- সত্যযুগ, ত্রেতাযুগ, দ্বাপরযুগ ও কলিযুগ। বর্তমান সময় কলিযুগের অর্ন্তভুক্ত।
প্রত্যেক যুগে ভগবানকে সন্তুষ্টি বিধানের জন্য আলাদা ভাবে ধর্মানুষ্ঠান করা হত। এ সম্ভন্ধে শ্রীমদ্ভাগবতের (১২/৩/৫২ শ্লোকে) শুকদেব গোস্বামী পরিক্ষিত মহারাজকে বলেন“ কৃতে যদ্ধ্যায়তো বিষ্ণুং ত্রেতায়াং ঘজতো মখৈ। দ্বাপরে পরিচর্যায়াং কলৌ তদ্ধরিকীর্তনাৎ।
” অথাৎ, সত্যযুগে বিষ্ণুকে ধ্যান করে, ত্রেতাযুগে যজ্ঞের মাধ্যমে যজন করে এবং দ্বাপর যুগে অর্চন আদি করে যে ফল লাভ হত, কলিযুগে কেবলমাত্র “ হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র” কীর্তনে সেই সকল ফল লাভ হয়। অথাৎ, সত্যযুগে যুগধর্ম ছিল ভগবান বিষ্ণুর ধ্যান করা। ধ্যানের মাধ্যমে ভগবানের সন্তুষ্টি বিধানের প্রয়াস করা হত।
বৈদিক শাস্ত্রমতে ধর্মের চারটি স্তম্ভ যথাঃ- সত্য, দয়া, তপ ও শৌচ। সত্যযুুগে এই চারটি স্তম্ভই বর্তমান ছিল। তখন চারভাগ ধর্ম ছিল এবং মানুষের আয়ুষ্কাল ছিল ১ (এক) লক্ষ বছর। ভগবানকে সন্তুষ্টি করার জন্য হাজার হাজার বছর ধ্যান (তপস্যা) করা হত।
ভগবানকে লাভ করা খুবই কষ্ঠসাধ্য ছিল। ত্রেতাযুগে যুগধর্ম ছিল যজ্ঞের মাধ্যমে ভগবানের সন্তুষ্টি বিধান করা। বিভিন্ন রকমের উপাদান যজ্ঞের অগ্নিতে আহুতির মাধ্যমে ভগবানকে আহবান করা হত। যজ্ঞে বিভিন্ন প্রকার বৈদিক মন্ত্র উচ্চারিত হত। এই যুগে তিন ভাগ ধর্ম এবং এক ভাগ অধর্ম ছিল। মানুষের আয়ু ছিল ১০ (দশ) হাজার বছর। দ্বাপর যুগে যুগধর্ম ছিল অর্চন। এ যুগে দুই ভাগ ধর্ম ও দুই ভাগ অধর্ম ছিল। মানুষের আয়ুস্কাল ছিল ১ (এক) হাজার বছর।
মানুষ অর্চনের মাধ্যমে ভগবানকে সন্তুষ্ট করার জন্য চেষ্টা করত। কলিযুগের যুগধর্ম হচ্ছে নাম সংকীর্তন করা। কলিযুগে তিন ভাগ অধর্ম এবং এক ভাগ ধর্ম। মানুষ অল্প আয়ূ, অল্প মেধা,কলহ প্রিয়, এবং অধার্মিক। কিন্ত কলি যুগে সবচেয়ে বড় আশীবাদ হল খুব অল্পতেই হরিনাম সংকীর্তন করার মাধ্যমে ভগবানকে লাভ করতে পারা যায়।
চৈতন্যচরিত্রামৃতে বর্ণনা হয়েছে “ কলিকালে নামরূপে কৃষ্ণ অবতার। নাম হৈতে হয় সর্বজগৎ নিস্তার ” এই কলিযুগে ভগবানের দিব্যনাম “ হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র ” হচ্ছে শ্রীকৃষ্ণের অবতার। কেবলমাত্র এই দিব্যনাম গ্রহন করার ফলে, যে কোন মানুষ সরাসরিভাবে ভগবানের সঙ্গ লাভ করতে পারেন। যিনি তা করেন তিনি অবশ্যই জড় জগত থেকে উদ্ধার লাভ করেন।
এই নামের প্রভাবেই কেবল সমস্ত জগৎ নিস্তার পেতে পারে। অন্যান্য যুগে অনেক বছর সাধনার ফলে যা লাভ হতো না, কলিযুগে শুধুমাত্র নিরন্তন হরিনামের মাধ্যমে তা অতি সহজেই লাভ হয়। কলিযুগে অধর্মের পরিমান বেশী থাকার ফলে শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য মহাপ্রভুর উদারতার ফল স্বরূপ কলির পতিত জীব খুব স্বল্প প্রয়াসে ভগবানকে লাভ করছে।
কলির প্রথম সন্ধ্যায় মহাপ্রভু কলির পাপাহত জীবদের মুক্তির বিধানের জন্য নবদ্বীপে আবির্ভূত হন এবং সর্বত্র হরিনাম দান করেন এবং তিনি ভবিষ্যৎ বানী করেন “ পৃথিবীতে আছে যত নগরাদি গ্রাম সর্বত্র প্রচার হইবে মোর এই নাম।” তার ধারাবাহিকতায় মহাপ্রভু আর্দশকে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে গুরুর আদেশকে অন্তরে লালন করে কৃষ্ণকৃপাশ্রীমূর্তি শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ সারা বিশ্বব্যাপি যুগধর্ম প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইস্কন প্রতিষ্ঠা করেন।