প্রশ্নঃ আমরা কি জানি কিভাবে ও কি কি দ্রব্য পূজা অর্চানায় দরকার ? এবং আরতি নিবেদন করার নিয়ম কি ?

প্রশ্নঃ আমরা কি জানি কিভাবে ও কি কি দ্রব্য পূজা অর্চানায় দরকার ? এবং আরতি নিবেদন করার নিয়ম কি ?

উত্তরঃ
((১))নীচের দ্রব্যগুলি একটি থালায় সাজিয়ে পূজাবেদীর বামদিকে রাখতে হয়ঃ
ক) তিনটি ধূপকাঠি
খ) ঘৃত প্রদীপ ( একটি বা সম্ভব হলে পাঁচটি পলিতা সহ )
গ) বিগ্রহগনের অভিষেকের জন্য একটি জল-শঙ্খ
ঘ) একটি সুন্দর বস্ত্র বা রুমাল
চ) এক রেকাবি সুরভিত ফুল
((২)) পূজাবেদীর কাছাকাছি আরও যে দ্রব্যগুলি রাখতে হবে, তা হলঃ
ক) চামর
খ) ময়ূর পালকের পাখা
গ) ঘন্টা
ঘ) পঞ্চপাত্র
ঙ) বাজানোর শঙ্খ
চ) আসন ( বসে/দাঁড়িয়ে আরতির জন্য )

((৩)) আচমনঃ
(ক) পূজা শুরু করার পূর্বে নিজের শুদ্ধি করণের জন্য ও তিলক দেওয়ার পর্বে আচমন করতে হয় কিভাবে আচমন করবেন তা জানুনঃ
ক) তিনফোটা জল পঞ্চপাত্র (বিশেষ তামার চামচ) থেকে নিয়ে ডান হাতের তালুতে রাখতে হয়।এবং “ওঁ কেশবায় নমঃ” মন্ত্রে সেটা চুমুক দিতে হয়। এবার ঐ হাতের তালুতে আরেক ফোঁটা জল দিয়ে তা একদিকে ফেলে দিতে হয়।
খ) আরও দু’বার ঠিক এরকম করতে হয়, তবে দ্বিতীয় বারের জন্য মন্ত্র “ওঁ নারায়ণায় নমঃ।এবং তৃতীয় বারের জন্য মন্ত্র “ওঁ মাধবায় নমঃ”।
গ) সবশেষে আগের মতো তিন ফোঁটা জল নিয়ে তা একদিকে ফেলে দিতে হয় এবং সেই সাথে এই মন্ত্রটি জপ করতে হয়, “ওঁ গোবিন্দায় নমঃ”।
ঘ) এরপর প্রণাম নিবেদন করতে হয় এবং পূজা শুরু করার অনুমতিদানের জন্য গুরুদেবকে অনুরোধ করতে হয়।
((৪)) আরতির পর্যায়গুলি নিম্নরূপঃ
ক) তিনবার শঙ্খধ্বনির মাধ্যমে আরতির আরম্ভের সংকেত জ্ঞাপন করতে হয়। পঞ্চপাত্র থেকে জল নিয়ে শঙ্খটি তখনই ধুয়ে রাখতে হয়।
খ) প্রতিটি দ্রব্য আরতিতে ব্যবহারের পূর্বে ডান হাত শুদ্ধ করে নিতে হয়। পন্থা হল ডান হাতে পঞ্চপাত্র থেকে তিন ফোটা জল দিতে হয়। প্রতিটি দ্রব্য একই প্রক্রিয়ায় শুদ্ধ করতে হয়।
গ) আরতির সময় ধূপ নিবেদন করতে হয় প্রতি বিগ্রহের সকল অঙ্গ প্রত্যঙ্গে সাতবার ( বিগ্রহ-অঙ্গের চতুর্দিকে বৃত্ত রচনার মাধ্যমে)
ঘ) ঘৃত প্রদীপও প্রতি বিগ্রহের পাদপদ্মে চারবার, নাভিপদ্মে দু’বার, মুখপদ্মে প্রদীপ তিনবার এবং বিগ্রহের সকল অঙ্গ প্রত্যঙ্গে সাতবার (বৃত্ত রচনার মাধ্যমে ) নিবেদন করতে হয়।
ঙ) অভিষেকের উদ্দেশ্যে রাখা জল জলশঙ্খের মধ্যে ঢালতে হয়। তারপর জলশঙ্খ বিগ্রহগণের মস্তকের উপরিভাগে সাতবার আবর্তিত করার মাধ্যমে নিবেদন করতে হয়।
চ) বস্ত্রখণ্ড ( স্মানের পর বিগ্রহগণের শ্রীঅঙ্গ মুছে দেওয়ার জন্য) ঘৃত প্রদীপের নিয়মে নিবেদন করতে হয়।
ছ) পুষ্প চারবার পাদপদ্মে নিবেদন করতে হয়।
জ) তারপর যত্ন সহকারে দোলানের মাধ্যমে চামর নিবেদন করতে হয়।
ঝ) একইভাবে ময়ূর-পাথার ব্যাজন করতে হয়, তবে শীতের মাসগুলোতে নয়( অর্থাৎ সাধারনত কার্ত্তিক থেকে শিবরাত্রি পর্যন্ত ময়ূর পাখা নিবেদন করা হয় না)।
ঞ) সমস্ত দ্রব্যগুলি সর্বপ্রথম গুরুদেবকে নিবেদন করতে হয়। তারপর পরমগুরুকে এবং বাঁদিকে থেকে শুরু করে পরপর বিগ্রহগণকে নিবেদন করতে হয়। যেখানে #তুলসী_দেবী বিরাজিত থাকবেন, সেখানেও অবশ্যই এই সমস্ত দ্রব্যদি তাকে নিবেদন করতে হবে, প্রতিটি তিনবার করে বৃত্ত করে। যেখানে ব্যাসাসন থাকবে সেখানেও এরকম করতে হবে। অবশ্যষে প্রত্যেক দ্রব্য চারটি বৃত্তের মাধ্যমে সমবেত ভক্তগণকে নিবেদন করতে হয়।
ট) প্রতিটি দ্রব্য নিবেদনের সময় বাম হাতে সর্বক্ষণ ঘন্টা বাজানের কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে।
ঠ) তারপর (ক) এ প্রদর্শিত নিয়মে পুনরায় শঙ্খধ্বনি করতে হবে।
ড)তারপর প্রেমধ্বনি করতে হবে।
ঢ) পরিশেষে পূজাবেদী ও মেঝে মুছে দিতে হয়।
((৫))যেখানে পূর্ণ আরতি করা সম্ভব নয়, সেখানে নিম্মোক্ত দ্রব্যগুলি দিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত আরতি নিবেদন করা যেতে পারে।
* ধূপ * ঘৃত প্রদীপ * পুষ্প
((৬))বিগ্রহ পূজার আরও অনেক বিস্তৃত বিধি নিয়মাদি রয়েছে। যে সব ভক্ত বিশদভাবে সেগুলি জানতে আগ্রহী, তারা মন্দিরের প্রধান পূজারীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।

((৭))স্মরণ রাখা উচিত যে, বিগ্রহ পূজার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান আন্তরিক শ্রদ্ধাভাব ও ভক্তির সঙ্গে সমস্ত দ্রব্যগুলি নিবেদন করা।